মেনু নির্বাচন করুন

** ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণির ভর্তির (সংশোধিত) বিজ্ঞপ্তি ...... ** অনার্স ৪র্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা উপলক্ষে একাদশ, দ্বাদশ, অনার্স ও মাস্টার্সের ক্লাসের সময় পরিবর্তন সংক্রান্ত ** ** বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা এবং জুলাই গণঅভ্যূত্থানের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ** ** ** ২০২৪ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা ফি-এর অব্যয়িত অংশ ফেরত প্রসংগে **

English

বাঙলা কলেজের ইতিহাস
সরকারি বাঙলা কলেজ, মিরপুর, ঢাকা

বাঙলা কলেজের ইতিহাস

প্রাকৃতিক প্রাচুর্যে ঐশ্বর্যময় ঐতিহ্যবাহী বাঙলা কলেজ ‘হাটি হাটি পা পা’ করে যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৬২ সালে, আজ তা প্রকার এক মহীরুহ। প্রায় তের হাজার ছাত্র-ছাত্রী, দেড় শতাধিক শিক্ষক, শতাধিক কর্মচারীর পদচারণায় এর আঙ্গিনা আজ মুখরিত। নানা বিবর্তন ও বিকাশের ধারাক্রমে ঐতিহ্যবাহী এ কলেজটি ঢাকা মহানগরীর উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে মিরপুর দারুস সালাম সড়কের পশ্চিম পাশে সুবিশাল প্রাঙ্গণ জুড়ে কোলাহলমুক্ত এক নৈসর্গিক পরিবেশে অবস্থিত। এর প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে বিশাল খেলার মাঠ ও শহীদ মিনার, উত্তরে বাণিজ্য ও বিজ্ঞান ভবন, মাঠের পূর্ব প্রান্তে নবনির্মিত দু’টি দশতলা দৃষ্টি নন্দন ভবন, দক্ষিণে ওয়াসা ভবন ও ছাত্রবাস, পশ্চিমে প্রশাসনিক ভবন, কলা ভবন, সুদৃশ্য মসজিদ, প্রশস্ত লেক বাঙলা কলেজকে করেছে আরো সুন্দর ও আকর্ষনীয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রিত এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত স্নাতক পাস, স্নাতক সম্মান, স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটি আজ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ১৬ ফ্রেব্রুয়ারি ২০১৭ সালে বাঙলা কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়েছে। এরপর থেকে স্নাতক পাস, স্নাতক সম্মান, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস অনুযায়ী একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, ডিজিটাল কন্টেন্ট, ওয়াইফাই জোন, ডাইনামিক ওয়েব সাইট, নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা, ইন্টারনেটসহ শিক্ষায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটিকে করেছে সকলের অনুকরণীয়। সর্বোপরি রয়েছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের মেধাবী কর্মকর্তাবৃন্দ যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এম.ফিল ও পি.এইচ.ডি ডিগ্রীধারী শিক্ষকবৃন্দের পদায়ন এ কলেজকে করেছে মানগত দিক দিয়ে আরও উন্নত। এ কলেজ সম্পর্কে তাই এ প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীদের রয়েছে বিশেষ আকর্ষণ। 

বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র যেখানে উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ে বাংলা মাধ্যমে শিক্ষাদান চলছে, সেখানে কলেজের নাম ‘বাঙলা কলেজ’ কারণ ইতিহাসের বাস্তবতায় এটি একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। তৎকালীন পাকিস্তানে উচ্চ শিক্ষার একমাত্র মাধ্যম ছিল ইংরেজি। তখন ইংরেজি মাধ্যমের পাশাপাশি উর্দু ভাষার শিক্ষা দেয়ার জন্য ঢাকার মিরপুরে একটি উর্দু মিডিয়াম হাইস্কুল (পরে বাংলা মিডিয়াম হাইস্কুল এবং বর্তমানে মিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়) ও করাচিতে একটি উর্দু মিডিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর প্রেক্ষিতে এদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের বাংলা মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষার জন্য উদ্বুদ্ধ করা, বাংলাভাষায় বিজ্ঞান চর্চা জনপ্রিয় করা ও প্রতিষ্ঠিত উর্দু হাইস্কুল ও কলেজের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ঢাকায় একটি ‘বাঙলা বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার জন্য এদেশের কয়েকজন বিখ্যাত মনীষী উদ্যোগ গ্রহণ করেনে। ‘বাঙলা বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে তাঁরা ‘বাঙলা কলেজ’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন এবং বাংলা পাঠদানের যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। 

১৯৬২ সালে বাঙলা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলে কলেজের ক্লাস লেকচার বাংলায় অনুবাদ করে পড়ানো হতো ও প্রত্যেক লেকচার বাংলায় সাইক্লোস্টাইল করে শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হতো। বিষয়ভিত্তিক সে নোট প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সংযোজনের পর ছাপার অক্ষরে বই হিসেবে প্রকাশ করা হতো। এভাবেই ক্রমন্বয়ে দেশব্যাপী উচ্চ শিক্ষায় বাংলার প্রচলন হতে থাকে। সে হিসেবে ‘বাঙলা কলেজ’ এদেশের উচ্চ শিক্ষার বাংলা মাধ্যমে পড়াশুনার পথিকৃৎ হয়ে আছে। 

ঐতিহাসিক পটভূমি : ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী বাংলাকে উপেক্ষা করে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেয়। এর প্রেক্ষিতে বাংলার আপামর জনসাধারণ তাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষায় পরিণত করার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বুকের তাজা রক্ত দিয়ে রাজধানীর পীচঢালা রাজপথ লাল রঙে রাঙিয়ে তোলেন। পরবর্তীতে ১৯৫৬ সালের সংবিধানে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃত পেলেও অফিস-আদালতে এর ব্যবহার ও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে প্রয়োগের ক্ষেত্রে নানা অসুবিধার অভিযোগ ওঠে। এসকল অসুবিধা দূর করার কার্যকর উপায় উদ্ভাবনের লক্ষ্যে এদেশের প্রথিতযশা কয়েকজন মনীষী উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সে প্রেক্ষিতে ১৯৬১ সালের ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ-এর সভাপতিত্বে বাংলা একাডেমীতে অনুষ্ঠিত এক সভায় ঢাকায় একটি ‘বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপন করার লক্ষ্যে প্রাথমিক পদক্ষেক হিসেবে ‘বাঙলা কলেজ’ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে অস্থায়ীভাবে ঢাকার বকশীবাজারস্থ নবকুমার ইনস্টিটিউটে ‘বাঙলা কলেজ’ এর কার্যক্রম শুরু করা হয়। তৎপরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণ শেষে ১৯৬৮ সালে বর্তমান স্থানে বাঙলা কলেজ স্থানান্তর করা হয়। ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি হয়েছিল তারই প্রেক্ষিতে ১৯৭১-এ বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে। স্বাধীনতা উত্তর ১৯৮৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়।